Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পোলট্রি শিল্প উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব কৌশল

পোলট্রি শিল্প উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব কৌশল
ড. নাথুরাম সরকার১ ড. শাকিলা ফারুক২ ড. সাবিহা সুলতানা৩ মোঃ আতাউল গনি রাব্বানি৪ ড. মোঃ রাকিবুল হাসান৫  

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষি বলতে ধান, পাট, ডাল, আখ, শস্য ছাড়াও প্রাণিসম্পদ এবং মৎস্যকে বোঝায়। তাই খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বুঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকে বুঝায়। সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে খাদ্যের সমন্বিত উৎপাদনে উন্নতি করতে হবে। তাই সুষম পুষ্টি নিশ্চিতকরণে প্রাণিজ আমিষের ভূমিকা অপরিহার্য। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে পোলট্রি ফার্ম, গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ায় প্রাণিসম্পদ খাতেও প্রভূত উন্নতি সাধিত হচ্ছে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মাংস ও ডিমে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও ৫০ শতাংশ মানুষ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। বর্তমান সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের স্বপ্ন।


বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রæত বৃদ্ধি ও আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে আশির দশক থেকে এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে পোলট্রি  শিল্প গতি পায় এবং সস্তায় উন্নত আমিষের উৎস হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে পোলট্রি  শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের আকার ধারণ করে এবং বছরে প্রায় ১৫-২০% হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্প্রতি ২০১৯-২০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৬ টি পোলট্রি  গ্র্যান্ড প্যারেন্ট ফার্ম, ২০৬টি লেয়ার ও ব্রয়লার ব্রিডার ফার্ম, ৮৮০০০টি লেয়ার ও ব্রয়লার খামার, ২১৭টি ফিড মিল, ১৫টি মিট প্রসেসিং প্লান্ট ও ২০১৫টি সোনালী ব্রিডার খামার এবং ৫৩৪টি প্রাণিস্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে দেশে মোট জিডিপির ১.০৩% আসছে পোলট্রি  শিল্প থেকে। পোলট্রি  শিল্পকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে ছোট বড় আকারের খামার, হ্যাচারি, ফিডমিল ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বিদেশী বিনিয়োগ ও এসেছে এই শিল্পে। বিগত কয়েক বছরে রেড মিটের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সস্তায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে পোলট্রি  শিল্প অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে আসছে।


পোলট্রি  প্রজাতি বেশির ভাগ প্রোটিন হজম ও শোষণ করতে না পারায় তা নাইট্রোজেন আকারে বিষ্ঠার সাথে নিঃসৃত হয়। উক্ত নাইট্রোজেনের ৮০% ইউরিক এসিড, ১০ % অ্যামোনিয়া এবং ৫ % ইউরিয়া আকারের বিষ্ঠার সঙ্গে নির্গত হয়। মুরগির বিষ্ঠা গাজনের ফলে নাইট্রোজেন ভেঙে অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয় এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত শেডে পোলট্রি পালন করা হয় এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর উপায় বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে উন্মুক্ত শেডে পোলট্রি  ফার্মিং করা হয়, ফলে দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। তাই পোলট্রি  উৎপাদনে গন্ধ দূরীকরণ এ শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত ২০১৯ সালে পোলট্রি ফার্মের গন্ধে মানুষের ভোগান্তি বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সুতরাং পোলট্রি  শিল্পের বিস্তারে দুর্গন্ধ একটি বিরাট বাধা। পোলট্রি  বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে বিষ্ঠা, লিটার, খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ, পালক, হ্যাচারির বর্জ্য, মৃত মুরগি ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ৪.৫২ মিলিয়ন টন পোলট্রি  বর্জ্য উৎপাদন হয়, তন্মধ্যে ৩.১ মিলিয়ন টন উৎপাদিত হয় বাণিজ্যিক খামার থেকে। খামারিদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০% খামারি পোলট্রি  লিটার ব্যবহার করে না, ৪০% খামারি বিক্রয় করে, ৩০% লিটার শস্যক্ষেতে ব্যবহার করে আর ১০% মাছ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। সাধারণত একটি ব্রয়লার মুরগি ১ কেজি খাবার খেলে ১ কেজি ফ্রেশ লিটার পাওয়া যায়। অন্যদিকে ১টি লেয়ার মুরগি থেকে বছরে ২০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যায়। কিন্তু, পোলট্রির বিষ্ঠা পুষ্টি গুণসমৃদ্ধ (টেবিল ১) হওয়ায় এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।


পোলট্রি  লিটার হতে গন্ধ নিরসনের কার্যকর উপায় নিরূপণে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যেঃ
১) উৎপাদন ঠিক রেখে পোলট্রি  খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে গন্ধ কমানো : গন্ধ কমানোর উপায় নিরূপণে ধারাবাহিক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত গবেষণায় রেশনে বিভিন্ন মাত্রায় প্রোটিন ও গ্লুটামিন ব্যবহার করে উৎপাদন দক্ষতা, গ্যাস উৎপাদন, মাংসের গুণাগুণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও লাভ ক্ষমতার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পোলট্রি  খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ ২ ভাগ কমিয়ে বিকল্প হিসেবে গ্লুটামিন অ্যামাইনো এসিড ০.২ % খাদ্যে ব্যবহার করলে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পোলট্রি  লিটারে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের (অ্যামোনিয়া, সালফার ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড ও মিথাইল মারক্যাপ্টেন) পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যায়।


২) পোলট্রির বিষ্ঠায় উৎপাদিত অ্যামোনিয়ার মাইক্রোবিয়াল ডাইজেশনের মাধ্যমে গন্ধ কমিয়ে আনা : বিকল্প উপায় হিসেবে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করে কিভাবে গন্ধ কমানো যায় তা নিরূপণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ট্রাইকোডার্মা পাউডার (প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম) ব্যবহার করে দিনে একবার পোলট্রি  লিটারের উপর স্প্রে করে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। উক্ত ফলাফল যাচাইয়ের জন্য পোলট্রি  উৎপাদন গবেষণা ফার্মের ৪টি সেডের পোলট্রি  লিটারের পিটে দিনে একবার করে স্প্রে করা হয় এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে গন্ধ কমার তথ্য পাওয়া যায়। অতঃপর গন্ধ দূরীকরণের কার্যকর ও সহজ উপায় নিরূপণের জন্য ট্রাইকোডার্মার দুইটি প্রজাতির বিভিন্ন ডোজ (২, ৪ ও ৬ গ্রাম/লিঃ পানি) এবং ফর্মের মধ্যে (Power/Liquid) কোনটিতে সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফল পাওয়া যায় তা নিরূপণের জন্য ৩ xধ ২ ফ্যাক্টেরিয়ালে গবেষণা ট্রিটমেন্ট সাজানো যায়।

পুষ্ঠি উপাদানের নাম ব্রয়লার বিষ্ঠা লেয়ার বিষ্ঠা
ড্রাই মেটার (%) ৮৮.০ ৮৮.০
ক্রুড প্রোটিন (%) ২৪.০ ২২.০
ইউরিক এসিড সিপি (%) ৬০.০ ৬০
ফ্যাট (%) ১.৫০ ১.৫
ক্রুড ফাইবার (%) ১.৫০ ১৫
অ্যাশ (%) ১৫.০ ২৫
ক্যালসিয়াম (%) ৩.৫০
ফসফরাস (%) ১.৫০
কপার (%) ০.০০৫ ০.০০৫
সিলিকা (%) ০.৫০ ০.৫০
সোডিয়াম (%) ০.৫০ ০.৫০


কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের জন্য ১০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১৮টি বালতি নেয়া হয়। প্রতিদিন ১ কেজি পরিমাণ পোলট্রি  বিষ্ঠা প্রতিটি বালতিতে রাখা হয়। প্রতিটি বালতিতে সংরক্ষিত বিষ্ঠা ২৩ ঘণ্টা অ্যারোবিক এবং ১ ঘণ্টা অ্যানেরোবিক ফার্মেন্টেশনে করা হয়। প্রতিদিন একবার করে বিভিন্ন ডোজের ট্রাইকোডার্মা মিশ্রণ নির্ধারিত বালতিতে স্প্রে করা হয়। অতঃপর দিনে একবার করে গ্যাস পরিমাপ করা হয় এবং ৭ দিন ধারাবাহিকভাবে নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রতি লিটার পানিতে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা পাউডার পানিতে দ্রবীভূত করে লিটারে স্প্রে করলে তাৎপর্যপূর্ণভাবে গ্যাস উৎপাদন কমে এবং গন্ধ নিবারণ হয়।


এ ছাড়া, আরও অনেকগুলো পন্থা অবলম্বন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিগণ পোলট্রি  শেডে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ক) পোলট্রি রেশনে সালফারযুক্ত অ্যামাইনো এসিডের পরিমাণ কমিয়ে পোলট্রি  লিটারে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের (মিথাইল মারক্যাপটান, হাইড্রোজেন সালফাইড) পরিমাণ কমানো যায়। খ) পোলট্রি  রেশনে ফাইটেজ এনজাইম ব্যবহারের মাধ্যমে লিটারে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ কমানো যায়। গ) মুরগির পুষ্টির প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে, উচ্চ হজমযোগ্য খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে ও  ফেজ ফিডিং (বয়স অনুসারে পুষ্টির চাহিদা নিরূপণ করে) রেশন তৈরি করলে পুষ্টি উপাদানগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হবে, এতে গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ কম হবে।


ঘ) খাদ্য প্রস্তুতের বিভিন্ন আকারের (পিলেট, ক্রাম্বল, ম্যাস) মধ্যে পিলেট আকারে খাদ্য সরবরাহ করলে মুরগির হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে বিষ্ঠার আর্দ্রতা কম হয়, তাই গন্ধ উৎপাদনকারী গ্যাসের পরিমাণ কম হবে।
 

ঙ) এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোলট্রির বিষ্ঠা হতে উৎপাদিত গ্যাসের দুর্গন্ধ দূরীকরণে সাম্প্রতিক সময়ে activated carbon, silica gel, Zeolite, Aqua ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। লিটারে আর্দ্রতা শোষণ করে ভোলাটাইল অরগানিক কম্পাউন্ড উৎপাদন হ্রাস করে ফলে দুর্গন্ধ কম হয়।

 
চ) পোলট্রি  বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উত্তম চর্চার মাধ্যমে কম্পোস্ট সার তৈরি, বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

ছ) পোলট্রি  শেডে বিশেষ করে লেয়ার শেডে লিটার পরিষ্কারের পর শেডের ভেতরে ও লিটার ফেলার গর্তে চুন ছিটিয়ে গন্ধ কমানো যাবে।
কাজেই এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা সম্পন্ন হলে গন্ধ দূরীকরণের সমন্বিত মডেল উদ্ভাবন ও প্রতিকার করা যাবে, যা এই শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে একদিকে যেমন পোলট্রি  ফার্মের গন্ধ নিবারণের পাশাপাশি উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, অন্য দিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।

১সাবেক মহাপরিচালক, ২-৫ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৩-৪বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষনা ইনস্টিটিউট, সাভার, ঢাকা-১৩৪১ ই-মেইলঃ  mdrakibulhassan@gmail.com; মোবাইল ঃ ০১৭১২৫১১১৮৩

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon